ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন যে মুসলিম শাসক

ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন যে মুসলিম শাসক

ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন যে মুসলিম শাসক
ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন যে মুসলিম শাসক

ধর্ম ডেস্ক: উমাইয়া খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)-কে বলা হয় দ্বিতীয় ওমর। কেননা তিনি তাঁর মাত্র দুই বছরের শাসনামলে সুশাসন, ন্যায় ও ইনসাফের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) যেসব কর্মকৌশল ও শাসননীতি গ্রহণ করেছিলেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. প্রশাসনে যোগ্য লোক নিয়োগ : প্রশাসনে নিযুক্ত কর্মীরা মূলত জনসাধারণের প্রতি শাসকের প্রতিনিধি। শাসক যত যোগ্য হন না কেন, প্রশাসনে যোগ্য ও সৎলোক না থাকলে তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হবেন।

ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) খলিফা হওয়ার পর প্রশাসনকে ঢেলে সাজান। প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি তিনটি বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন :
ক. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি,

খ. আমানত বা সততা,

গ. হুসনুদ্দিন তথা দ্বিন পালনে যত্নশীল হওয়া।

খলিফা নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান খালিদ বিন রাইয়ানকে সরিয়ে আমর বিন মুহাজিরকে নিযুক্ত করেন। তিনি আমরকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! হে আমর, তুমি জানো, তোমার ও আমার মধ্যে ইসলাম ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই।

কিন্তু আমি তোমাকে অধিক পরিমাণ কোরআন তিলাওয়াত করতে শুনেছি এবং আড়ালে ও সুন্দরভাবে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। তোমাকে আমি আমার প্রহরী নিযুক্ত করলাম।’

২. বৈধ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি : ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) মনে করতেন, রাষ্ট্রের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের অবৈধ উপার্জন থেকে বিমুখ করতে হলে, প্রথম তাঁদের জন্য পর্যাপ্ত বৈধ সুযোগ দিতে হবে। ফলে তিনি খলিফা হওয়ার পর তাঁদের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করেন।

তিনি ১০০ থেকে ২০০ দিনার ভাতা নির্ধারণ করেন। যদিও তিনি নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করতেন না। ব্যক্তিগত সম্পদ থেকেই পারিবারিক খরচ নির্বাহ করতেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমি কর্মীদের তাঁদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারি না এবং পরিবারকে অন্যের অধিকার দিতে পারি না।’

৩. উপহার গ্রহণ নিষিদ্ধ করা : ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) খলিফা হওয়ার পর নিজে কোনো উপহার গ্রহণ করতেন না এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিযুক্ত তাঁর কর্মীদের জন্য তা নিষিদ্ধ করেন।

তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো, আল্লাহর রাসুল (সা.) কি উপহার গ্রহণ করতেন না? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এটি আমাদের জন্য এবং আমাদের পরবর্তীদের জন্য ঘুষ।

৪. অপচয় নিষিদ্ধ করা : খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) রাষ্ট্রীয় সম্পদের সব ধরনের অপচয় নিষিদ্ধ করেন। তিনি খলিফা হওয়ার পর তাঁকে বরণ করতে একটি বাহন নিয়ে আসা হয়। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, এটি কী? তারা বলল, এটি এমন একটি বাহন, যাতে কেউ কোনো দিন আরোহণ করেনি এবং খলিফার অভিষেকের জন্য এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বললেন, এটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে দান করে দাও। এরপর নিজের খচ্চরে আরোহণ করে রাজদরবারে যান। এমনকি তিনি ব্যক্তিগত কাজে সেই কালি ও কলম ব্যবহার করতেন না, যা তিনি রাষ্ট্রীয় কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে গ্রহণ করেছিলেন।

৫. ব্যবসা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ : ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ব্যবসা করতে নিষেধ করেন। তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে লেখেন, আমরা মনে করি, একজন প্রশাসক ব্যবসা করতে পারেন না এবং তাঁর শাসনাধীন অঞ্চলে ব্যবসা করা তাঁর জন্য বৈধ নয়। কেননা একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা যখন ব্যবসা করেন, তখন তিনি অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। যদি তিনি এমনটি নাও করেন, তবে ব্যাবসায়িক ব্যস্ততা তাঁকে দায়িত্ব পালন ও মুসলমানের প্রয়োজন পূরণ থেকে বিরত রাখবে। আল্লামা ইবনে খালদুন (রহ.) তাঁর এই নীতির প্রশংসা করেন এবং বলেন, শাসকদের ব্যবসা করাটা প্রজাদের জন্য ক্ষতিকর। এতে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়।

৬. জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন : ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)-এর আগে সাধারণ মানুষ খলিফার কাছে পৌঁছাতে পারত না। নিরাপত্তাকর্মী ও নানা আনুষ্ঠানিকতা খলিফার সাক্ষাৎকে অসম্ভব করে তুলেছিল। তিনি এই প্রাচীর ভেঙে ফেলেন। যারা দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরবে এবং দেশ ও উম্মাহর জন্য কল্যাণকর পরামর্শ দেবে, তাদের জন্য তিনি পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি কোষাধ্যক্ষের উদ্দেশে লেখেন, যে ব্যক্তি আমাদের কাছে আসবে কোনো অন্ধকার দূর করতে, দ্বিনি বিষয়ে মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে, সে ১০০ থেকে ৩০০ স্বর্ণমুদ্রা পাবে। এটা নির্ধারিত হবে সফরের দূরত্ব ও বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে। হয়তো আল্লাহ তার মাধ্যমে সত্য প্রকাশ করবেন, অথবা বাতিল দূর করবেন অথবা কল্যাণের দুয়ার খুলে দেবেন।

৭. রাষ্ট্রীয় সম্পদের হিসাব গ্রহণ : ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) খলিফা হওয়ার পর প্রশাসকদের কাছে রাষ্ট্রীয় সম্পদের হিসাব তলব করেন। এমনকি আগের কোনো অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না হলে সে জন্য তাদের কাছে জবাবদিহি গ্রহণ করেন। পূর্ববর্তী অর্থের হিসাব বুঝিয়ে না দেওয়ায় তিনি খোরাসনের প্রশাসক ইয়াজিদ বিন মুহাল্লাবকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠান।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply